সন্তানের জন্য ৪৩ বছর ধরে পুরুষ সেজে রইলেন মা, ‘দেশের সেরা মা’ সম্মানে ভূষিত করল সরকার! তুমুল প্রশংসা নেটিজনদের
কায়রো: পরিবারের কল্যাণের জন্য নিজের সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন অনেকেই৷ কোথাও এই ভূমিকা নেন মা অথবা বাবা, কোথাও দাদা বা দিদি৷ কিন্তু মিশরের এক ‘সিঙ্গল মাদার’ (একা মা) প্রথমে সন্তান, পরে তারও সংসার প্রতিপালনের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার তুলনা খুব বেশি নেই৷
সেই কারণেই ৬৪ বছর বয়সি সিসা আবু দাউহকে ‘আদর্শ মা’ হিসাবে সম্মান জানিয়েছে মিশরের এক প্রাদেশিক সরকার৷ এই বিরল ‘রোজগেরে গিন্নি’কে পুরস্কারটি দিয়েছে লাক্সরের সোশ্যাল সলিড্যারিটি ডিরেক্টরেট৷ ও খবর ‘আল আরবিয়া’ সংবাদপত্রর৷
কী অবদান সিসার?
তেতাল্লিশ বছর আগে, লাক্সরবাসী সিসার স্বামী যখন মারা যান তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা৷ ঘরে অন্নজলও নেই৷ অন্য দিকে, সিসার সম্প্রদায়ে মেয়েদের বাইরে কাজে বেরোনো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ৷ সমাজপতিরা মনে করতেন মেয়েরা বাইরে বেরোলে, ছেলেদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করলে সমাজের ক্ষতি হবে৷ তাই সিসার কাছে তখন একটি পথই খোলা ছিল৷ ভিক্ষাবৃত্তি৷
সিসা সে পথে হাঁটেননি৷ তাঁর সম্প্রদায়ের পুরুষরা যে পোশাক পরেন, সেই কাঁধ থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ঢিলেঢালা জোব্বা বা জিবাব এবং তাকিয়া নামের টুপি পরে তিনি ঘরের বাইরে এলেন৷ পুরুষ সেজে পুরুষের কাজই নিতে লাগলেন৷ কখনও জুটল ইট ভাঙার কাজ, কখনও বা গৃহনির্মাণস্থলে সিমেন্ট পৌঁছে দেওয়ার কাজ৷ বাড়তি রোজগারের জন্য চলছিল জুতো পালিশের কাজও৷ সিসার কথায়, ‘গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য, আমার মেয়ে আর তার সংসারের জন্য কঠোর শ্রমেও পিছপা হইনি৷’ এই ভাবেই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন ৪৩ বছর৷
সিসা আরও বললেন, ‘ছদ্মবেশ নিলেও, নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরা যাতে চিনে না ফেলে, আমি দূর-দূরান্তের গ্রামে কাজ নিতাম৷ সেখানে কেউ আমাকে চিনতে পারত না৷’
যথাসময়ে সিসার কন্যা হুদার বিবাহ হল৷ কিন্তু বিধি বাম৷ হুদার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি আর কাজে যেতে পারতেন না৷ ফলে মেয়ের সংসারের দায়িত্বও নিতে হয় সিসাকে৷ জুতো পালিশ করে যা রোজগার হয় তাতে ভাতকাপড়ের অভাব অন্তত হয় না৷
হুদা তাঁর মায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ তিনি বলেন, ‘মা প্রচণ্ড খাটতে পারেন৷ আজও প্রতিদিন সকাল ছ’টায় উঠে কাজে বেরিয়ে যান৷’